ছয় দফা আন্দোলন (পাঠ ৩)

সপ্তম শ্রেণি (মাধ্যমিক) - বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় - বাংলাদেশের মুক্তিসংগ্রাম | NCTB BOOK
409

১৯৬৬ সালের ৫ই ফেব্রুয়ারি লাহোরে বিরোধী দলের এক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এখানে শেখ মুজিবুর রহমান পূর্ব-পাকিস্তানে বাঙালির সব ধরনের অধিকার ফিরে পাওয়ার জন্য ছয় দফা কর্মসূচি ঘোষণা করেন। এই ছয় দফা ছিল মূলত স্বায়ত্তশাসনের দাবি। অর্থাৎ পাকিস্তানের সাথে যুক্ত থেকেই পূর্ব পাকিস্তানের শাসনের দায়িত্ব ও ক্ষমতা থাকবে পূর্বপাকিস্তানের মানুষের হাতে।

ছয় দফা কর্মসূচি

১. ১৯৪০ সালের ঐতিহাসিক লাহোর প্রস্তাবের ভিত্তিতে শাসনতন্ত্র রচনা করে পাকিস্তানকে একটি সত্যিকার যুক্তরাষ্ট্র রূপে গড়তে হবে। তাতে সংসদীয় পদ্ধতির সরকার থাকবে। সকল নির্বাচন সর্বজনীন প্রাপ্তবয়স্কের ভোটে অনুষ্ঠিত হবে। আইনসভাসমূহের সার্বভৌমত্ব থাকবে।

২. ফেডারেল (কেন্দ্রীয়) সরকারের এখতিয়ারে কেবলমাত্র দেশরক্ষা ও পররাষ্ট্রীয় বিষয় দুটি থাকবে। অবশিষ্ট সমস্ত বিষয় প্রদেশের হাতে থাকবে।

৩. পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের জন্য দুটি সম্পূর্ণ পৃথক অথচ সহজে বিনিময়যোগ্য মুদ্রা প্রচলন করতে হবে। এই ব্যবস্থা অনুসারে মুদ্রা কেন্দ্রের প্রাদেশিক সরকারের হাতে থাকবে। দুই অঞ্চলের জন্য দুটি স্বতন্ত্র কেন্দ্রীয় ব্যাংক থাকবে। অথবা দুই অঞ্চলের জন্য একই মুদ্রা থাকবে। কিন্তু পূর্ব পাকিস্তানের মুদ্রা পশ্চিম পাকিস্তানে পাচার হতে পারবে না।

৪. সকল প্রকার কর ও খাজনা ধার্য এবং আদায়ের ক্ষমতা আঞ্চলিক সরকারের হাতে থাকবে। আঞ্চলিক সরকারের আদায়কৃত খাজনার নির্ধারিত অংশ আদায়ের সঙ্গে সঙ্গে ফেডারেল তহবিলে জমা হয়ে যাবে।

৫. দুই অঞ্চলের বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের পৃথক পৃথক হিসাব রাখতে হবে। এবং দুই অঞ্চলের অর্জিত বৈদেশিক মুদ্রা যার যার এখতিয়ারে থাকবে এবং কেন্দ্রীয় সরকারের জন্য উভয় অংশ সমান অথবা নির্ধারিত আনুপাতিক হারে বৈদেশিক মুদ্রা প্রদান করবে। আঞ্চলিক সরকারই বিদেশের সাথে বাণিজ্য চুক্তি ও আমদানি-রপ্তানি করার অধিকার রাখবে।

৬. পূর্ব পাকিস্তানের জন্য আলাদা একটি আধা সামরিক বাহিনী গঠন করতে হবে।

ছয় দফা দাবির প্রতিক্রিয়া

ছয় দফা দাবি দেখে শঙ্কিত হয়ে যান সামরিক শাসক জেনারেল আইয়ুব খান। কারণ স্বায়ত্তশাসন পেয়ে গেলে পূর্ব পাকিস্তানে তাদের শোষণ বন্ধ হয়ে যাবে। তাছাড়া একসময় অঞ্চলটি স্বাধীন হয়ে যাওয়ার আশঙ্কাও তারা করত। এর ফলে কমে যাবে তাদের বৈদেশিক মুদ্রার ভাগ। কারণ পূর্ব পাকিস্তানে উৎপাদিত পাট বিক্রির টাকাই ছিল পাকিস্তানের বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের সবচেয়ে বড়ো উৎস। কিন্তু এই টাকা পূর্ব পাকিস্তানের উন্নতিতে ব্যয় না করে ব্যয় করা হতো পশ্চিম পাকিস্তানের সামরিক ও বেসামরিক ক্ষেত্রে। বড়ো বড়ো চাকরিতে বাঙালিকে খুব কমই সুযোগ দেওয়া হতো। কিন্তু স্বায়ত্তশাসন পেয়ে গেলে পশ্চিম পাকিস্তানিদের একচেটিয়া সুবিধা পাওয়া সম্ভব হবে না। তাই আবার শুরু হয় ষড়যন্ত্র। এই সময় সরকার প্রদেশের নানা জেলায় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের নামে মামলা দিতে থাকে। গ্রেফতার হয়রানির শিকার হন নেতারা।

কাজ ১: সামরিক শাসনবিরোধী আন্দোলনের সূচনা ব্যাখ্যা কর।
কাজ ২: ১৯৬২ সালের ছাত্র আন্দোলনের কয়েকটি কারণ উল্লেখ কর।
Content added By
Promotion
NEW SATT AI এখন আপনাকে সাহায্য করতে পারে।

Are you sure to start over?

Loading...